বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটে ভারসাম্যপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার

ল্যানসেট ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন কমিশন জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশ্বের বর্তমানের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে এটিকে একুশ শতকের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি একদিকে হিমালয়ের বরফ গলছে অন্যদিকে মহাসাগরগুলোর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত ছোট-বড় ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবী ক্রমান্বয়ে অস্থিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এমন আকস্মিক আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী নামক গ্রহটির চিরচেনা শান্ত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বসবাসের অনুপোযুগী হয়ে ওঠছে বিশ্বের নানা কর্মব্যস্ত শহরগুলো। এর মধ্যে মেক্সিকো, সাংহাই, চাদ, ইরাক, পাকিস্তান, বাহরাইন, বুরকিনা ফাসো, কুয়েত, ভারত, মিসর, তাজিকিস্তানের মত দেশগুলো রয়েছে।  আর এ তালিকার দৌড়ে কিন্ত পিছিয়ে নেই আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। নানারকম দূষণে দেশটি প্রতিনিয়ত মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বিশ্বের অন্যান্য দূষিত শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

ল্যানসেট জার্নাল বলছে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি এই দেশ বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের শীর্ষ দেশগুলোর সঙ্গে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

মূলত ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে দেশটি ডেলটা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কবলে প্রায়ই পড়ে থাকে।

আর এসব ঝুঁকি একটি দেশের জনগণের সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মত। 

বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক জরিপে দেখা যায়, নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ২০১৮-১৯ সালে ৯৫১৬ জন রোগী এ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রিভালেন্স ও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ নানা উদ্বেগের ফলে হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছে জরিপটি। 

মূলত এই জলবায়ু পরিবর্তন কিন্ত দীর্ঘমেয়াদি খরা, বন্যা, বসত ভিটা নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়া, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার তৈরি করে থাকে। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নগরায়ন, বন উজাড় করে আবাসস্থল গড়া, জোরপুর্বক নগরায়নের দিকে কর্মের সন্ধানে মানুষকে ঠেলে দেওয়া আজকে আমাদেরকে ফেলেছে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। নিজ অঞ্চলেই বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করলে নগরকেন্দ্রিক ঘনবসতির চাপ কমে আসত। যেদিকে আমাদের মোটেই মনোযোগ নেই। 

২০১৭ সালে এক জরিপে দেখা মিলে, বিশ্ব জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বিষাদগ্রস্ত ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন যাপন করছেন। 

একইবছর এলএমআইসি’র (লো ইনকাম এন্ড মিডল ইনকাম কাউন্ট্রি) হিসাব মতে, ৮০ শতাংশ মানুষ নানামূখী চাপ ও হতাশার ফলে নানারকম মানুষ নানা ধরণের পঙ্গুত্বেরশিকার হচ্ছেন। 

এদিকে দূষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ল্যানসেট কমিশনের নতুন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ও সিসার বিষক্রিয়ায় ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন। আর তাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মৃত্যুর মূল কারণ বায়ুদূষণ।

গত২০২২ সালের এক গবেষণায় ল্যানসেট দাবি করেছে, ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে প্রতি ৬ জনে একজন দূষণের কারণে মারা গেছেন। যুদ্ধ, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, যক্ষ্মা বা মাদকের কারণে বার্ষিক বৈশ্বিক মৃত্যুর চেয়ে এই হার অপেক্ষাকৃত বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দূষণের কারণে মৃত্যুর হার গত ২ দশকে ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা এর নেপথ্য কারণ।

গবেষণার প্রধান লেখক রিচার্ড ফুলার বলেন, 'স্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব প্রচুর। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়ে। বিশাল স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডায় দূষণ প্রতিরোধ উপেক্ষিত।'

ল্যানসেট অনলাইন জার্নাল বলছে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে জলবায়ু ঝুকি,পরিবর্তন ও এ সংক্রান্ত সৃষ্ট সমস্যার পরিণাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অপ্রতুলতা রয়েছে। 

 ফলে দেশটির জনগণ ঠিক বুঝতে পারে না সামনের দিকে কেমন ঝুঁকি রয়েছে। 

এবার আমরা যদি দেশীয় প্রেক্ষাপটে দৃষ্টি দেই তবে দেখব দেশের সরকার এ বিষয়ে সচেতনতার সঙ্গে তাদের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণে নিরুৎসাহিত করা, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বিকল্প জ্বালানির সংস্থানে মন দেওয়া, বিশ্ব জলবায়ু ফাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি জোরালো আহবান জানানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

এতকিছুর পরেও আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না দূষণ ও ঝুঁকির মাত্রা। 

এর অন্যতম একটি কারণ ব্যক্তি সচেতনতার অভাব। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মনিটরিং আরও জোরদার করা যেসব ক্ষেত্রে মানুষ তাদের সীমাবদ্ধতার পরিচয় দিবে বা অসচেতনমূলক আচরণ দেখাবেন। 

আবার রাজধানী কেন্দ্রিক  গাড়ির চাপ কমানো আরেকটি জরুরি বিষয়। কেননা, প্রচুর পরিমাণ ব্যক্তিযান বায়ু দূষণের আরেকটি কারণ। এছাড়াও নিয়ম না মেনে যত্র-তত্র শিল্প কারখানা স্থাপন, বর্জ্য নিষ্কাশনে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, নদী ভরাট করে স্থাপনা গড়ার অসম প্রতিযোগিতা, কার্বন সমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতাসহ নানা বিষয় আমাদের দেশকে আরও উষ্ণায়নের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব প্রতিরোধেও সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত যতক্ষণ না পর্যন্ত নগরকেন্দ্রিক নির্ভরতা না কমানো যাবে ততক্ষণ আমাদের মানব জীবনের অস্তিত্ব চরম সংকটাপুর্ন হতে থাকবে। 

এ বিষয়ে আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল ধারণা করছে ক্রবর্ধমান দাবদাহ ও বাতাসের আর্দ্রতার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ সামনের দশকগুলোতে আরও ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাতে পারে যদি না সংকট মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। 

ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের তাপমাত্রা আরও ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। যা কিনা ১৯৭৬ -২০১৯ পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক পাঁচ ডিগ্রীর চেয়ে বেশি হবে। 

আর এই উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ বাংলাদেশের ঘন জনবসতি বলে গবেষণায় দেখা যায়। 

বিশেষত ঢাকা ও চট্রগ্রামে গড়ে ওঠা কংক্রিটের স্থাপনার বৃদ্ধি ও সবুজায়ন থেকে সরে আসাও এমন সংকটের কারণ। 

ল্যানসেট বলছে, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের পর সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি ছিল পানিদূষণ। আর এ দূষণে ২০১৯ সালে ১ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। আর এরপরেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে শীর্ষে ছিল সিসার বিষক্রিয়া।

গবেষণা অনুসারে, মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটেছে দূষণকে অগ্রাধিকার দিতে অক্ষম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, দূষণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হওয়া ১০টি দেশের বেশিরভাগই আফ্রিকার। দেশগুলো হলো চাদ, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, নাইজার, সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়া, লেসোথো, বুলগেরিয়া ও বুরকিনা ফাসো। 

এ ছাড়া, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণে মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে ছিল ভারত।

এর আগে ২০১৭ সালে একই গবেষণার প্রকাশিত প্রাথমিক সংস্করণে বলা হয়েছিল, প্রতি বছর দূষণে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এর অর্থ প্রতি ৬ জনে একজনের মৃত্যুর কারণ দূষণ। এতে করে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য, গবেষকরা ২০১৯ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন।  

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৬ টি গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমেই নৈতিকতা ও শরীরের নানা রোগবালাই বাড়ছে। 

শুধুমাত্র ১ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই এমন রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বলেও গবেষনা বলছে। 

বাংলাদেশের পাশাপাশি এমন সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ তালিকায় অবশ্য বেশি এগিয়ে রয়েছে চীন। 

এদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ডেটা ইন্টারন্যশলান বাংলাদেশের ১৫০ টি নগর ও পল্লী অঞ্চলে একটি জরিপ চালায়। জরিপে ৬৬ বছরের কম ও ৫ বছরের বেশি যাদের বয়স তারা অংশ নিয়েছিলেন। মূলত দুইস্তরের এ জরিপের প্রথম পর্বে  প্রাইমারি স্যাম্পলিংয়ের ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ বেশ কিছু পল্লী এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর দ্বিতীয়ে স্তরে মূলত নারী ও শিশুদের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। 

এই জরিপের ফলাফলে, নারী, শিশু, বাড়ির কর্তা ও নানা বয়সী মানুষের মধ্যে মানসিক অস্থিরতার চিত্র ওঠে আসে। আর এর কারনের শীর্ষে নানারকমের দূষণ, নদী ভাঙন,বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মোকাবেলায়  ক্রমশই মনোবল হারিয়ে ফেলছেন এসব মানুষ। অন্যদিকে শহরের জনগোষ্ঠী শব্দ, বায়ু, পানি দূষণসহ অতিমাত্রায় নগরায়ন, ভূমিকম্প আতংকে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছেন। 

এই জরিপে মূলত চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলেই এমন মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন লোকেরা। ফলে, নিদ্রাহীনতাও আশংকাজনক হারে দেশের মানুষের মধ্যে বাড়ছে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। 

ফলস্বরূপ গৃহহীন, কৃষি জমি হারানোসহ গবাদি পশুর প্রানহানির মত ঘটনা ঘটে থাকে। 

দেখা গেছে, আমাদের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় বেশি ভুগে থাকেন। এছাড়াও শব্দ দুষণেও প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মানুষ বরণ কওরে নিচ্ছেন নানা শারীরিক জটিলতা। 

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ এন্ড কাউন্সিলও তাদের এক জরিপে এমনটাই জানিয়েছে।  

সংস্থাটির পরিচালিত হেলথ কোয়েশ্চানাইরি-৯ (পিএইচকিউ-৯) এ ওঠে আসা প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণের আমাদের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি মানসিক ঝুঁকির কবলে পড়ছে। 

পক্ষান্তরে জেনারেলাইজড এনজাইটি ডিসঅর্ডার-৭ নামক চালানো জরিপেও একই তথ্য অঠে আসে।

আমরা দেখলাম জলবায়ু সংকট ও পরিবর্তনের ফলে আমাদের মানসিক ও শারীরিক নানা জটিলতাগুলো। 

তাহলে প্রশ্ন এ থেকে উত্তরণের উপায় কি?  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ মর্মে একটি প্রেসক্রিপশনও দিয়েছে। সেটি অনুসরণ করলে হয়ত ঝুঁকি লাঘবে সহায়ক হবে। 

হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) বলছে, শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত মিথেন গ্যাসের বদলে বায়ো গ্যাস ব্যবহার, গৃহস্থালি কাজে সহজ ও কার্বনমুক্ত জ্বালানী ব্যবহার, ডিজেল চালিত পরিবহনের পরিবর্তে বিকল্প পরিবিহন যা জ্বালানী সাশ্রয়ের সঙ্গে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখবে এমন পরিবহণের প্রচলন, বিল্ডিং কোড যাথাযথভাবে মেনে পরিকল্পিত উপায়ে শহরের ভবন নির্মাণ,জ্বালানি নীতিমালায় পরিবর্তন এনে সোলার, বায়ু ও জলশক্তির মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও কৃষিপ্রধান অঞ্চলে সঠিক বর্জ্যনিষ্কাশনের ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসুচি বাড়ানোর মধ্যদিয়ে জনসচেতনতা তৈরির বিষয়ে গুরুত্বারোপের ওপর জোর দেওয়া। 

এতে করে বায়ু দুষণ কমার পাশাপাশি প্রচলিত কাঠ, কেরোসিন, চারকোল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্বন মনোঅক্সাইড নিঃসরিত হয় তা কমে আসবে। এছাড়াও জমিতে সালফেট, নাইট্রেট, অ্যামোনিয়া, সোডিয়াম ক্লোরাইড, কালো কার্বনের ব্যবহার কমালে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে। ফলে ওজোন স্তরের ক্ষয় যেমন রক্ষা পাবে অনুরূপ নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণও কমে আসবে। 

এখান আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে কোন পথে হাঁটব। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কেমন বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাব। যান্ত্রিক সভ্যতার অবগাহনে ভেসে চলা উদ্দেশ্যহীন পথচলা নাকি আদর্শ, স্নিগ্ধ,কোমল, পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ উপায়ে বেঁচে থাকার সুন্দর আদর্শ ধরণী।

এখনই সময় ভাববার কেননা হাতে খুব বেশি সময় আমরা পাব বলে মনে হয় না। নগর সভ্যতার মোড়কে এতটাই পথভ্রষ্ট হচ্ছি প্রতিনিয়ত যেন শেকড়ের সন্ধানের সময়টুকুও হাতে নেই পর্যাপ্ত। এখন রুপকথার গল্পের মত শুনায় আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে একসময় যখন ছিল- বিস্তৃত খেলার মাঠ, ভরা দুপুরে পুকুরে ডুব দেওয়া, নির্মল বায়ুর আলিঙ্গনে সকালের ঘুম থেকে জাগা, সন্ধ্যাতারা দেখে বাড়ি ফেরা, উঠোনে বসে বড়দের গল্প শুনে ঘুমাতে যাওয়াসহ হারিয়ে ফেলা ভালবাসার অদ্ভূত সেই দিনগুলো। 

দেরি হলেও হয়ত এখনও সময় আছে নিজের মানসিকতা বদলানোর, বদলে দেওয়া পুরো সমাজের চিত্র। মনে রাখতে হবে, আজ পর্যন্ত একটি দেশের সরকার একা কখনও সব নেতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত রাষ্ট্রের জনগণের মনন ও চিন্তায় ইতিবাচক পরিবর্তন না আনতে সক্ষম হয়। তাই আমাদের উচিত বৈশ্বিক এই ভয়াবহ জলবায়ু সংকট হতে বাঁচতে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থে নিজের মেধা, ইচ্ছা ও মানসিকতাকে পুরোদ্যমে কাজে লাগানো।   

তথ্য সংগ্রহ:  

ল্যানসেট জার্নাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রয়টার্স, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল 

 




সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //